হযরত আব্দুল কাদির জিলানি (র.)-এর জীবনাদর্শ (পাঠ ৬)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - আদর্শ জীবনচরিত | NCTB BOOK
123

হযরত আব্দুল কাদির জিলানি (র.) ৪৭০ হিজরি মোতাবেক ১০৭৭ খ্রিষ্টাব্দে ইরানের জিলান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মস্থানের নামানুসারে তাঁকে জিলানি বলা হয়। তাঁর উপনাম আবু সালেহ, উপাধি মুহিউদ্দীন, কুতুবে রাব্বানি ইত্যাদি। তাঁর পিতার নাম আবু সালেহ মুসা। তিনি হযরত ফাতিমা (রা.)-এর পুত্র ইমাম হাসান (রা.)-এর বংশধর ছিলেন। তাঁর মাতার নাম উম্মুল খায়ের ফাতিমা। তিনি ইমাম হোসাইন (রা.)- এর বংশধর ছিলেন। এজন্য হযরত আব্দুল কাদির জিলানি (র.)-কে আওলাদে রাসুল বলে গণ্য করা হয়।
এ মহান ওলি বাল্যকাল হতেই শান্ত, নম্র, ভদ্র, চিন্তাশীল ও জ্ঞানানুরাগী ছিলেন। শৈশবে তিনি কুরআন মুখস্থ করেন। জিলানে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার পর ১৮ বছর বয়সে উচ্চ শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে বাগদাদ গমন করেন। নিজামিয়া মাদ্রাসায় তাফসির, হাদিস, ফিকাহ, উসুল, ধর্মতত্ত্ব, তর্কশাস্ত্র, ইতিহাস ও দর্শনে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন।
হযরত আব্দুল কাদির জিলানি (র.) সাধারণ মানুষ থেকে ব্যতিক্রমী একজন মহান সাধক ও তাপস হবেন তা তাঁর শৈশবকালের একটি কাহিনি থেকে বোঝা যায়। বর্ণিত রয়েছে যে, দুগ্ধপোষ্য অবস্থায় তিনি রমযান মাসে দিনের বেলায় মাতৃদুগ্ধ পান থেকে বিরত থাকতেন। তাঁর মা তাকে দুধ পান করাতে গেলে তিনি মুখ ফিরিয়ে নিতেন।
হযরত আব্দুল কাদির জিলানি (র.) শরিয়তের জ্ঞানার্জনের পর মা'রেফাতের (আধ্যাত্মিক) জ্ঞান- লাভের জন্য বাগদাদের সুফি-দরবেশদের দরবারে যাতায়াত শুরু করেন। তাঁর সাথে সাধক হযরত হাম্মাদান (রা.)-এর পরিচয় ঘটে। তিনি তাঁর সাহচর্যেই সুফিতত্ত্বে জ্ঞানলাভ করেন।
হযরত আব্দুল কাদির জিলানি (র.) আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য ২৫ বছর লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। ৫২১ হিজরির শেষ ভাগে পুনরায় লোকালয়ে ফিরে আসেন এবং দীন প্রচার শুরু করেন।

হযরত আব্দুল কাদির জিলানি (র.)-এর নিকট শিক্ষা লাভের জন্য অসংখ্য আলেম সমবেত হতেন। তিনি বুধবার স্থানীয় ঈদগাহে সকালবেলায় বক্তৃতা করতেন। কিন্তু শ্রোতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ঈদগাহটির আয়তন বৃদ্ধি করা হয় এবং সেখানে একটি মুসাফিরখানাও স্থাপন করা হয়।
জীবনের শেষ দিকে তিনি দিনের বেলায় খুতবা ও ফতোয়া প্রদানে ব্যস্ত থাকতেন। নিষিদ্ধ পাঁচ দিন ব্যতীত সারা বছর রোযা রাখতেন।
তিনি ছিলেন অভাবীদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তাঁর ছাত্রজীবনে বাগদাদে অনটন দেখা দেয়। তিনি তার নিকট থাকা স্বর্ণমুদ্রা থেকে অভাবীদেরকে দান করতেন এবং নিজে খেয়ে না খেয়ে জীবন অতিবাহিত করতেন। অসহায়দের প্রতি তাঁর দরদ কেমন ছিল, তা তাঁর কথা থেকে বোঝা যায়। তিনি বলেন, 'আফসোস তোমার নিকট পুরোদিনের খাবার মওজুদ আছে। অথচ তোমার নিকটতম প্রতিবেশী উপবাস থাকছে। তোমার ইমান অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি তুমি নিজের জন্য যা চাও অন্যের জন্য তা না চাও।'
এ মহান ওলি বড়পীর নামে প্রসিদ্ধ। তিনি ৯০ বছর বয়সে ৫৬১ হিজরি সনের ১১ রবিউস সানি তারিখে ইন্তিকাল করেন। তাঁর মাজার বাগদাদে অবস্থিত। আমরা বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানি (র.)-এর আদর্শে আমাদের জীবন গড়ব, সদা সর্বদা সত্য কথা বলব, অভাবী ও দুস্থদের সাহায্য ও সেবা করব।

কাজ: শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে হযরত আব্দুল কাদির জিলানি (র.)-এর চরিত্রের মহৎ গুণাবলির একটি তালিকা তৈরি করবে।
Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...